৬০০০ টেস্ট রানে পৌঁছানোর পরও কি মুশফিকুর রহিম তার ক্যারিয়ার আরও দীর্ঘ করতে পারেন?
৬০০০ টেস্ট রানে পৌঁছানোর পরও কি মুশফিকুর রহিম তার ক্যারিয়ার আরও দীর্ঘ করতে পারেন?

বাংলাদেশের অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার মুশফিকুর রহিম সবেমাত্র ক্যারিয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছেন, তিনি বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড় যিনি টেস্ট ক্রিকেটে ৬০০০ রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। ২২শে অক্টোবর ঢাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রথম টেস্টের ২য় দিনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের ২৬তম ওভারে ডেন পিয়েডের বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তিনি এই কীর্তি অর্জন করেন। এখন, রহিম যখন বাংলাদেশের টেস্ট রান-স্কোরিং চার্টের শীর্ষে বসেছেন, প্রশ্ন উঠেছে: তিনি কি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেট আইকন হিসাবে তার লিগ্যাসি আরও প্রসারিত করতে পারবেন?

বাংলাদেশী ক্রিকেটের জন্য একটি যুগান্তকারী অর্জন

৬০০০ টেস্ট রানে পৌঁছানো রহিমের ধারাবাহিকতা, স্থিতিস্থাপকতা এবং বাংলাদেশের ক্রিকেট যাত্রায় অপরিসীম অবদানের একটি প্রমাণ। তিনি ৯৩ টেস্টে তার ১৭২ তম ইনিংসে এই মাইলফলকটি অর্জন করেন, যা নিজেকে বাংলাদেশের টেস্ট ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে। তার স্বদেশীদের মধ্যে, তামিম ইকবাল ৫১৩৪ রান সহ টেস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার হিসাবে তার পিছনে রয়েছেন, যেখানে অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এবং মুমিনুল হক যথাক্রমে ৪৬০৯ এবং ৪২৬৯ রান নিয়ে তাদের পিছনে রয়েছেন। রহিমের কৃতিত্ব তার দীর্ঘায়ু এবং দক্ষতার প্রমাণ হিসাবে দাঁড়িয়েছে এমন একটি ফর্ম্যাটে যা আয়ত্ত করতে বাংলাদেশ সবসময় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। 

মুশফিকুর রহিমের সেরা পারফরম্যান্স

রহিম বেশ কয়েকটি স্মরণীয় ইনিংস খেলেছেন, ধাপে ধাপে তিনি এ পর্যায়ে উঠেছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার সেরা পারফরম্যান্স এসেছে, যেখানে তিনি তিনটি সেঞ্চুরি সহ ১৭ টেস্টে (৩০ ইনিংস) ১৩৪৬ রান সংগ্রহ করেছেন। রান সংগ্রহের দিক থেকে শ্রীলঙ্কা তার প্রিয় প্রতিপক্ষ, উপমহাদেশীয় পরিস্থিতিতে শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার এবং মোকাবিলা করার ক্ষমতা এ থেকে বুঝা যায়। তাছাড়া, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং জিম্বাবুয়ের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ৫০০ রান করে বিশ্বব্যাপী শীর্ষ দলগুলির বিরুদ্ধে রহিম নিজের চিহ্ন তৈরি করেছেন। শক্তিশালী পারফরম্যান্সের এই বৈচিত্র্যময় বিন্যাস তার অভিযোজনযোগ্যতা এবং কৌশলের আয়ত্তকে প্রকাশ করে।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি টেস্টে এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটিতে রহিমের তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি বড় স্কোরের জন্য তার ক্ষুধা তুলে ধরে। তার সবচেয়ে সাম্প্রতিক কাছাকাছি ডাবল সেঞ্চুরিটি এই বছরের শুরুর দিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এসেছিল, যেখানে তিনি ১৯১ রান করেছিলেন, যা তার দীর্ঘ ইনিংস খেলার এবং বাংলাদেশের ব্যাটিংকে নোঙর করার ক্ষমতার উপর ভিত্তি তৈরি করে।

মুশফিকুর রহিম কি তার লিগ্যাসি বাড়াতে পারবেন?

এখন প্রশ্ন উঠেছে ৩৭ বছর বয়সী রহিম এই লিগ্যাসি আরও লম্বা করতে পারবেন কিনা? বয়স অবশ্যই একটি ফ্যাক্টর, তবুও রহিমের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স দেখায় যে তার এখনও অনেক কিছু দেওয়ার বাকি আছে। বিভিন্ন ম্যাচের পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, যেমনটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম দিকে তিনটি উইকেট নেওয়ার পর মাহমুদুল হাসান জয়ের সাথে তার গুরুত্বপূর্ণ পার্টনারশিপ দেখা যায়, প্রমাণ করে যে তিনি এখনও বাংলাদেশের পক্ষে সঙ্কটকালীন নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়।

যদি তিনি তার ফিটনেস এবং ইনজুরি সংক্রান্ত উদ্বেগগুলি কার্যকরভাবে পরিচালনা করেন, রহিম এখনও তার রানের খাতায় উল্লেখযোগ্যভাবে রান যোগ করতে পারেন। তার সাম্প্রতিক ফর্ম ইঙ্গিত করে যে তার নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার দৃঢ় সংকল্প রয়েছে, সম্ভবত টেস্টে ৭০০০ রান করার লক্ষ্যও রয়েছে। তার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার সাথে, রহিম তার জ্ঞান তরুণ খেলোয়াড়দের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দিকেও মনোনিবেশ করতে পারেন, যাতে তিনি অবসর নেওয়ার পরেও বাংলাদেশ ক্রিকেটে তার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়।